দুজনে একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ শুয়ে ছিল খেয়াল করেনি দুজনেই। হটাত একটা অচেনা মোবাইল রিংটোনের শব্দে, দুজনেই সচকিত হয়ে একে ওপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকল। দুজনেরই চোখে জিজ্ঞাসা। নগ্ন অবস্থাতেই রণ নেমে আসলো বিছানা থেকে। আওয়াজের সুত্র ধরে এগিয়ে চলল রণ। আওয়াজটা কিচেন থেকেই আসছে। এগিয়ে গেল রণ কিচেনের দিকে।
ততক্ষনে মহুয়া উঠে বসেছে। মেঝেতে পড়ে থাকা নাইটিটা পড়ে ফেলেছে। হাঁটার শক্তি একরকম হারিয়ে ফেলেছে মহুয়া। গতরাতের সম্ভোগের পর এমনিতেই হাঁটতে গিয়ে উরুসন্ধি টনটন করছিল, তার ওপরে আবার এখন রণ ওকে আর একবার নির্মম ভাবে ভোগ করেছে। যোনির মুখটা ছড়ে গেছে। ভীষণ জ্বলছে লঙ্কা বাটার মতন। বিছানাতেই বসে থাকল কিছুক্ষন একভাবে।
“এটা কার মোবাইল মা? কিচেনে একটা ন্যাকড়ার নিচে সযত্নে রাখা ছিল। সব থেকে যেটা আশ্চর্যের যে, মা এটা ভালও করে দেখ, এটা ভয়েস রেকর্ডিং মোডে অন অবস্থায় ছিল। তার মানে আমাদের মাঝের কথাবার্তা সব রেকর্ড হয়ে আছে”, বলে রেকর্ডিং টা অন করে মহুয়াকে কিছুটা শুনিয়ে দিল রণ। “সর্বনাশ, আমি তো জানিনা এটা কার রে”? মহুয়ার কথা শেষ হতে না হতেই, কলিংবেলের শব্দে চমকে উঠল দুজনে।
মহুয়া কোনও রকমে হেঁটে বাথরুমে ঢুকে গেল। আর রণ তাড়াতাড়ি একটা তোয়ালে জড়িয়ে দেখতে গেল কে এসেছে, এই সময়ে ওঁদের বাড়িতে। মহুয়াও মনের মধ্যে একগাদা উৎকণ্ঠা নিয়ে বাথরুমের ভেতরে দাড়িয়ে থাকল। সব জট পাকিয়ে যাচ্ছে মাথার মধ্যে, কে তাঁকে শপিং মলে কে তাঁকে অনুসরণ করছিল? কে বৃষ্টি ভেজা রাতের অন্ধকারে জানালার পাশে দাঁড়িয়েছিল?
আবার কে নিজের মোবাইল ভয়েস রেকর্ডিং মোডে ওঁদের কিচেনে লুকিয়ে রেখে গেছিল? এখন আবার ডোরবেল বাজাচ্ছে? এই সব চিন্তা করতে করতে মাথাটা ঘুরে গেল আপাত নিরীহ মহুয়ার। কোনও রকমে জলের ট্যাপ টা ধরে নিজেকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করলো।

“কি হল এই সময়ে তোমার তো আসার কথা না নমিতাদি? তুমি এখন কেন এসেছ গো”? বলে দরজাটা পুরোটা না খুলে জিজ্ঞেস করলো রণ। “ওহহ দাদাবাবু, আমি মানে আমার মোবাইল ফোন টা ভুল করে ফেলে চলে গেছিলাম, ওটাই নিতে এসেছি গো”, আমতা আমতা করে উত্তর দিল নমিতা। বাথরুমের ভেতরে মহুয়া, বাইরে নমিতার গলার আওয়াজ পেয়ে কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেল। এই সময়ে মাগীটার আসার কথা না। তবে কি মাগীটা ইচ্ছে করে ওখানে মোবাইলটা ভয়েস রেকর্ডিং অন করে রেখে গেছিল?
কথাটা মনে হতেই বাথরুম থেকে ফ্রেশ নাইটি পড়ে বেড়িয়ে আসলো মহুয়া। নাহহহ……মাগীটাকে আর বিশ্বাস করা যাবেনা। ও ইচ্ছে করেই রেখে গেছিল ফোনটা। যদি ভুল করে রেখে যেত তাহলে, ভয়েস রেকর্ডিং অন করে রেখে যেত না। তারমানে মাগীটা জানতে চেয়েছে যে ওর আর রণের মধ্যে কি কথাবার্তা হয়। রাগে দুঃখে লাল হয়ে গেল মহুয়া।
“এই নমিতা দাঁড়া, কিছু কথা আছে তোর সঙ্গে”, বলে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসলো মহুয়া। “তুই কি ভেবেছিস রে, আমরা দুজনে কি খুব বোকা? খুব জানার ইচ্ছে তাই না, আমার আর আমার ছেলের মধ্যে কি কথাবার্তা হয়? ভুল করে যদি রেখে যেতিস, তাহলে ওই ভয়েস রেকর্ডিঙটাও কি ভুল করে অন রেখে গেছিলি নাকি রে? কই এমন তো আগে কখনও করিস নি তুই? কি জানার আছে বল, জিজ্ঞেস করলে কি আমি বলতাম না? আর আমাদের মা ছেলের মাঝে কি এমন থাকতে পারে, যেটা তুই লুকিয়ে জানতে চেয়েছিলি?
তোকে কি কেউ এই কাজটা করার জন্য বলেছে? নাকি নিজের ইচ্ছেয় করেছিস? উত্তর যেটাই দিস, তোর ওপর আর বিশ্বাসটা রাখতে পারলাম না রে নমিতা। তোকে কাল থেকে আর আসতে হবেনা আমাদের বাড়ি”, এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে, হাঁপাতে লাগলো মহুয়া। মাঝে রণ কিছু বলতে চাইছিল মহুয়াকে বাধা দিয়ে, কিন্তু মহুয়া বড় বড় চোখ করে রণের দিকে একবার তাকাতেই রণ চুপ করে যায়। মায়ের রুদ্রমূর্তি দেখে, চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করে রণ।
নমিতা আমতা আমতা করে উত্তর দেয়, “না না মৌ দিদি, আমাকে কেউ বলেনি। আমি ভুল করেই রেখে গেছিলাম গো ওটা রান্নাঘরে। আর ওই যেটা অন করে রেখেছিলাম বলছ, সেটাও ভুল করে অন হয়ে গেছিল হয়ত”, বলে নিজের সাড়ীর আঁচলের একটা কোনা খুটতে খুটতে, মাটির দিকে তাকিয়ে থাকল।
মহুয়ার চোখের সঙ্গে চেষ্টা করেও কিছুতেই চোখ মিলিয়ে কথা বলতে পারলো না নমিতা। অপরাধীর মতন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকল। “তুমি এখন যাও নমিতাদি। পরে যদি তোমার দরকার লাগে, তাহলে তোমাকে আমরা জানিয়ে দেব”, বলে রেকর্ডিংটা ডিলিট করে মোবাইলটা নমিতার হাতে ফেরত দিল রণ। নমিতাও কাউকে কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
নমিতা বেরিয়ে যেতেই, তাড়াহুড়ো করে রণ একটা প্যান্ট শার্ট কোনোরকমে পরে নিল। “মা তুমি দরজাটা বন্ধ করে দাও তো, আমি একটু বেরচ্ছি, আমাকে দেখতে হবে নমিতা কোথায় যায়। আমি একটু আসছি”, মহুয়া কিছু বলে বাধা দিতে যাচ্ছিল রণকে, কিন্তু তার আগেই বিদ্যুৎ বেগে রণ বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
কলোনির গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল নমিতা। পেছনে রণ ও নমিতার সঙ্গে একটা নিরাপদ দূরত্ব রেখে ওকে অনুসরণ করে চলেছে। গেট দিয়ে বেরিয়ে, বড় রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল নমিতা, পেছনে রণ ও ওকে অনুসরণ করে চলেছে। খুব এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে হাঁটছে নমিতা, যেন কাউকে খুঁজে চলেছে। বড় রাস্তা পার করে, একটা মোড়ের কাছে একটা ভাঙ্গা চায়ের ঝুপড়ীর কাছে দাঁড়ালো নমিতা, রণ ও সঙ্গে সঙ্গে একটা গাছের আড়ালে দাড়িয়ে দূর থেকে নমিতার ওপর লক্ষ্য রাখল।
বেশ কিছুক্ষন ধরে নমিতা দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছিল, যেন কারও এখানে থাকার কথা অথচ সে এখনও এসে পৌছয়নি। চায়ের ঝুপড়ীর ভেতর থেকে একটা লুঙ্গি পরা লোক বেরিয়ে এসে ওকে কিছু বলল, নমিতাও ওকে হাত নেড়ে নেড়ে কিছু বলল। দূর থেকে ওঁদের কথা শুনতে পায় না রণ। কিছুক্ষন পরে নমিতাকে দেখা গেল ঝুপড়ীর দিকে আরও এগিয়ে যেতে, দূর থেকে রণের মনে হল, ঝুপড়ীর ভেতরে কেউ একজন লোক আছে, নমিতার ঝুপড়ীর বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁর সঙ্গে হাত পা নেড়ে কথা বলতে শুরু করলো।
নমিতা ওই ঝুপড়ীর ভেতরে থাকা লোকটার সঙ্গে কথা শুরু করতেই সেই লুঙ্গিয়ালা লোকটা ঝুপড়ীর পেছন দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। নমিতার ভাব ভঙ্গি দেখে মনে হল যেন সে এই দ্বিতীয় লোকটার জন্যই অপেক্ষা করছিল। উত্তেজিত হয়ে নমিতা কিছু একটা লোকটাকে বলছে, মাঝে মাঝে হাত তুলে কলোনির দিকে ইশারা করছে, রণ ভালই বুঝতে পারে দূর থেকে, যে তাঁদের নিয়েই আলোচনা হচ্ছে।
তারমানে এই ঝুপড়ীর ভেতর থেকে কথা বলা লোকটাই হয়ত নমিতাকে এই কাজের জন্য রাজী করিয়েছে। কিন্তু কে এই লোকটা? কি উদ্দেশ্য থাকতে পারে লোকটার? কেন এই কাজের জন্য নমিতাকে লাগিয়েছিল লোকটা? মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে রণের।
“নাহহহহ……কাজ টা খুব কাঁচা হয়ে গেছে মায়ের। এখনি মহুয়াকে বাই বাই বলার সময় আসেনি। বরঞ্চ ও রোজকার মতন আসা যাওয়া করলে, ওর মুখ থেকে অনেক কথা বার করা যেত, অনেক কথা জানা যেত, যে কে আছে এর পেছনে, সেদিন বৃষ্টি ভেজা রাত্রের জানালার পাশে দাঁড়ান সেই অজানা লোকটা আর নমিতার সঙ্গে যে লোকটা কথা বলছে, দুজনে একই ব্যাক্তি না তো? কে হতে পারে লোকটা? কি তাঁর অভিসন্ধি”? কথাটা মাথায় আসতেই হটাত একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল রণের শরীরে।
চোয়াল শক্ত করে বেশ কিছুক্ষন গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ওঁদের দিকে তাকিয়ে থাকল রণ। বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে হাত প্যাঁ নেড়ে কথা বলার পর নমিতাকে দেখা গেল শাড়ীর আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে অন্য দিকে একা বেরিয়ে গেল। মায়ের কথা মনে পড়তেই, ঘরের দিকে দ্রুত গতিতে পা চালাল রণ।
বাড়ি ফিরে এল রণ। মাথায় একগাদা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু তো একটা গোলমেলে ব্যাপার আছে কোনও খানে। অঙ্কটা কিছুতেই মিলছেনা রণের কাছে। সব কিছুই ভীষণ রকমের ধোঁয়াটে। বেশ দুশ্চিন্তার মধ্যে পরে গেল রণ। দৈনন্দিন অফিস আছে, দিল্লীতে নতুন প্রোজেক্ট শুরু হতে চলেছে, হয়ত ওখানে গিয়েও বেশ কিছুদিন থাকতে হতে পারে রণকে।
কিন্তু ঘরের এমন অবস্থার মধ্যে কার ওপর ভরসা করে তাঁর নিরীহ, সুন্দরী আর সর্বোপরি তাঁর প্রানের চেয়েও প্রিয় মা কে রেখে যাবে। “নাহহহহহহ……কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে হবে”, দ্রুত গতিতে বাড়ির দিকে পা চালাল রণ।
নমিতা আর তাঁর পেছু পেছু রণ বেরিয়ে যাওয়ার পর, এক গাদা দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে নিজের বেডরুমের নরম সাদা বিছানায় সমহুয়া বিছানায় শুয়ে ছিল। মেজাজ টা ভীষণ রকমের বিগড়ে গেছিল আকস্মিক ঘতে যাওয়া ঘটনাগুলোয়। সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা । একদমই হাঁটতে পারছেনা মহুয়া, মারাত্মক জ্বালা করছে উরুসন্ধি। রণের বন্য ভালবাসায় সারা শরীরে বিষ ব্যথা য় টসটস করছে। তবে নিজের একমাত্র সন্তানের সুখ আর আরামের জন্য সে সব কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করতে প্রস্তুত।
ভীষণ ভাললেগেছিল, যখন ভালবাসার চরম মুহূর্তে রণ তাঁকে ‘মৌ’ বলে ডেকে, আঁকড়ে ধরে নিজের অণ্ডকোষ খালি করে ঘন উত্তপ্ত বীর্য তাঁর যোনির অভ্যন্তরে ঢেলে দিয়েছিল। ব্যাপারটা মনে পড়তেই, একটা দুষ্টুমি ভরা মুচকি হাসি খেলে গেল মহুয়ার মাধুর্যে ভরা রসালো ওষ্ঠে। ইসসসসস……ছেলেটা কেমন দৌড়ে বেড়িয়ে গেল নমিতার পেছনে পেছনে, ওকে বাধা দেওয়া উচিত ছিল।
যদি ওর কোনও বিপদ হয়, তাহলে সে পাগল হয়ে যাবে। কথাটা ভাবতেই আবার নতুন করে দুশ্চিন্তায় ভরে গেল মনটা। একবার উঠে বসার চেষ্টা করলো মহুয়া, জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখার জন্য, অসহ্য ব্যথা য় উঠতে পারলনা মহুয়া। বাইরে ডোরবেলের আওয়াজ শুনতে পেয়েই কোনও মতে উঠে বসল মহুয়া। আসতে আসতে গিয়ে দরজাটা খুলে দিল রণের জন্য। “তুই ঠিক আছিস তো সোনা?
কি দরকার ছিল ওর পেছনে যাওয়ার? এমন মেয়েমানুষের ওপর একটুও বিশ্বাস নেই আমার। তোর যদি কোনও বিপদ হয়, তাহলে আমার কি হবে সেটা একবার ভেবে দেখেছিস তুই? আমি তোর জন্য পাগল হয়ে যাব রে সোনা। বল, কথা দে, আমাকে ছেড়ে তুই কোথাও যাবি না”? বলে রণের বুকের ওপরে মাথা রেখে, রণ কে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল সন্তান সোহাগিনী মহুয়া।
রণ ও মহুয়াকে একহাতে জড়িয়ে ধরে, আর একহাত দিয়ে মহুয়ার মাথার ঘন রেশমি চুলে বিলি কেটে দিতে থাকল। কি বলে সান্তনা দেবে মা কে ভাষা হারিয়ে ফেলল রণ। মহুয়াকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বিছানার দিকে নিয়ে যেতে গিয়ে বুঝতে পারলো রণ যে মহুয়া ঠিক মতন হাঁটতে পারছেনা। “কি হল মা, কষ্ট হচ্ছে তোমার? হাঁটতে পারছনা বুঝি তুমি”? রণকে জড়িয়ে ধরে চোখ ভরা জল নিয়ে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, “না রে সোনা, একদম হাঁটতে পারছিনা রে”, বলে লজ্জায় মুখটা রণের বিশাল চওড়া গুঁজে দিল আহ্লাদিনি মহুয়া।
“ঠিক আছে মা, তোমার ছেলে থাকতে তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা”, বলে এক ঝটকায় মহুয়াকে কোলে তুলে নিল বলিষ্ঠ রণ। “এইইইইইই………কি করছিস সোনা তুই”? বলে দুহাতে রণের গলা জড়িয়ে, মুখটা রণের বুকে গুঁজে দিল মহুয়া। রণ মহুয়াকে কোলে করে সোজা নিজের বিছানায় শুইয়ে দিল। নিজে মায়ের মাথার কাছে বসে, মহুয়ার মাথায় হাত বোলাতে শুরু করে দিল। আসতে আসতে নিজের মুখটা মায়ের মুখের ওপর নামিয়ে, মায়ের কপালে একটা গভীর চুমু এঁকে দিল রণ।
ম্রিদু স্বরে বলে উঠল, “কাঁদছিলে কেন গো? কাঁদবেনা একদম। তোমার চোখ দিয়ে জল পড়লে, সেটা কে আমি জল না রক্ত দেখি মা। আমি বেঁচে থাকতে, তোমার চোখে যেন জল না দেখি………”, কথাটা শেষ করতে পারলো না রণ, তার আগেই মহুয়া এক হাত দিয়ে রণের মুখ চেপে ধরে বলে উঠল, “আর আমি বেঁচে থাকতে তুই এই কথাটা আর মুখে আনবি না, প্রমিস কর, আর বলবনা বলে, কেন এইসব বলিস তুই? আমার আয়ু যেন তোর হয়ে যায় সোনা।
আর কোনদিনও আমার সামনে এমন অলুক্ষনে কথা নিজের মুখে আনবিনা”, বলে রণের গলা জড়িয়ে নিজের বুকের মধ্যে রণের মাথাটাকে পরম স্নেহে ধরে রইল মহুয়া। রণ ও বাধ্য ছেলের মতন মায়ের নরম বুকে মাথা গুঁজে বলে উঠল, আচ্ছা বাবা বলবনা………বলবনা………বলবনা, এবারে হয়েছে মা”? বলে দুহাতে মহুয়াকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে থাকল। একটা শান্তির গভীর নিঃশ্বাস মহুয়ার মুখ থেকে বেড়িয়ে আসলো।
মিস্টার রণজয়, তোমাকে আগামি কাল দিল্লী যেতে হবে।
সব কিছু ঠিকঠাকি চলছিল মহুয়া আর রণের জীবনে, ওঁদের ছোট্ট ভালবাসায় ভরা সংসারে। মাখো মাখো আদরে ভাসছিল দুজনেই। সেই আগন্তুকের কোথাও একরকম ভুলতে বসেছিল দুজনেই। বাড়ির আসে পাশে সেই লোকটাকে আর দেখা যাইনি। নমিতাও এখন আর আসেনা। দুজন মানুশের সংসারে কতটুকুই বা কাজ থাকে? মহুয়া আর রণ দুজনে মিলে মিশে সেইটুকু নিজেরাই করে নিচ্ছিল।
কিন্তু কথায় আছে না, “ভাগ্যের লেখন কখনও খণ্ডন করা যায়না”। এতসুখ এত শান্তি দেখে বোধহয় নিয়তিও সবার অলক্ষে একটু হেসেছিল। দুজনে ভালবাসায় এত বুঁদ হয়েছিলো, নিজেদের মধ্যে এত মগ্ন ছিল যে, বুঝতে পারছিল না, পরিষ্কার নীল আকাশের এক কোনায় একটা কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে অত্যন্ত সন্তর্পণে। রণ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে, নতুন পদে দুর্দান্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। নতুন পদে উত্তীর্ণ হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মদ্ধেই অফিসে সবার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছে।
সেদিন সকালে নিজের কিউবিকালে বসে একটা ডেস্কটপে একটা কাজ করছিল রণ। বস মিস্টার অরিজিত ব্যানারজি তখন ও অফিসে ঢোকেননি। সচরাচর মিস্টার ব্যানারজি এত দেরি করেন না অফিসে আসতে। কিন্তু আজ দেরি হচ্ছে বসের, ভাবতে ভাবতেই হুড়মুড় করে ঢুকলেন মিস্টার ব্যানারজি।
কিছুক্ষন পরেই কাবেরি এসে তাঁর পিঠে হাত দিয়ে পাশে হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “ হাই ডার্লিং, বস কলিং, তাড়াতাড়ি চলে যাও বসের কেবিনে, আমিও আসছি একটু পরে”, বলে দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল, কিছু ফাইল পত্তর আনতে। রণ কিছুক্ষন হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে, নিজের ডেস্কটপটা বন্ধ করে বসের কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল।
মিস্টার ব্যানারজি বেশ চিন্তান্বিত ভাবে ঠোঁটের কোনায় একটা সিগারেট ঝুলিয়ে নিজের কেবিনে পায়চারি করছিলেন, রণ ঢুকতেই নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পরলেন। “এসেছ রণজয়, তোমার সঙ্গে কিছু দরকারি কথা আছে আমার, তাই ডেকে পাঠালাম”, বলে আর একটা সিগারেট ধরালেন মিস্টার ব্যানারজি। রণ বুঝতে পারছিল যে, ভদ্রলোক মনে হয় খুব টেনশনে আছেন, না হলে এত ঘন ঘন স্মোক করেন না উনি সচরাচর। গুরুগম্ভীর আওয়াজে বলে উঠলেন, “মিস্টার রণজয়, তোমাকে আগামি কাল দিল্লী যেতে হবে।
ফ্লাইটের টিকিট আমি করিয়ে দিচ্ছি। তুমি এখন বাড়ি চলে যাও। নতুন প্রোজেক্টে একটা প্রবলেম হচ্ছে, তোমার ওখানে যাওয়া এক্লান্তই প্রয়োজনীয়। Kaberi will join you next week in Delhi, আর এখানে তোমার দিক থেকে কোনও অসুবিধা থাকলে আমাকে বলে ফেলো, হেসিটেট করবেনা, তোমার ফ্লাইটের টিকিট তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবে”, বলে রণের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।
রণ কিছু না বলে কিছুক্ষন চুপ করে রইল। একরাশ চিন্তা রণের মাথায় ভিড় জমাতে শুরু করে দিল। একে সময়টা একদমই ঠিক নয়। কেমন যেন একটা অশুভ ছায়া তাঁদের বাড়ির ওপর পড়তে শুরু করেছে। কেউ এমন একজন আছে, যে মনে হচ্ছে ওত পেতে রয়েছে, তাঁর কুনিঃশ্বাসটা রণ আর অল্পবিস্তর হলেও মহুয়াও টের পেতে শুরু করেছে। কুনিঃশ্বাসের সঙ্গে সেই অজানা অচেনা অতিথির ছায়াটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তাছাড়া মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা সবে সহজ আর সরল হতে শুরু করেছে।
যেমন করে মাকে সে চেয়েছিল, তেমন করে সে মাকে সবে পেতে শুরু করেছে। মাও যেন নিজের অভিশপ্ত জীবনের শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে পেরেছে। কিছুটা যেমন সদ্য উড়তে শেখা কোনও পাখী। সেই পাখীকে আগলে আগলে রাখতে হবে। না হলে ঘরের বাইরে প্রচুর শকুন, উড়ে বেড়াচ্ছে, যারা এই সদ্য উড়তে শেখা পাখীকে দেখলে তাঁকে ধরে তাঁর নরম মাংস খুবলে খুবলে খাবে। নমিতাটার ওপর ভরসা ছিল প্রচুর। কিন্তু সেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
অনিমেশও এখনও আসেনি, সেও তাঁর মাকে নিয়ে ট্রিটমেন্ট করাতে গেছে। কবে আসবে সে কথাও জানা নাই। এই অবস্থায় মাকে একা ছেড়ে দিল্লী যাওয়া অথচ মানাও করা যাবেনা। প্রাইভেট আইটি কোম্পানি গুলো ভালও বেতন হয়ত দেয়, কিন্তু একটু বেগতিক দেখলে মুশকিল। সঙ্গে সঙ্গে অন্য কেউ যে তাঁর জায়গাটা নিয়ে নেবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই রণের। আর সেও তো চায় তাঁর কোম্পানি দা সিলভার লাইনকে আকাশের উচ্ছতায় দেখতে।
আর এই প্রোজেক্টটার ওপর তার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তাই না বলা যাবেনা। তাঁদের কে অফার করা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রথম প্রোজেক্ট এটা। প্রোজেক্টটা ঠিক ঠাক সময়ে নামাতে পারলে, তাঁদের কোম্পানি দা সিলভার লাইনের যেমন নাম হবে, তেমন তাদের কোম্পানি সরকারের বিশ্বাস যোগ্যতাও অর্জন করতে পারবে।
“ওকে স্যার, যেমন বলবেন তেমন হবে। কিন্তু কয়েকটা ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই স্যার”, রণের কোথায় চোখ তুলে তাকালেন মিস্টার ব্যানারজি। “কি সাহায্য চাও তুমি পরিষ্কার করে বল রণজয়? আমাদের কোম্পানি “দা সিলভার লাইন” তোমাকে সব রকম সুবিধা আর সাহায্য করতে প্রস্তুত, বলে আর একটা সিগারেট ধরালেন মিস্টার ব্যানারজি।
একটু ভেবে রণজয় বলতে শুরু করলো, “স্যার আপনি তো জানেন আমাদের বাড়িতে মানুষ বলতে শুধু আমি আর আমার মা। আর এখানে আমাদের তেমন কোনও আত্মীয় স্বজন ও নেই, যাকে আমি বলব যে, মায়ের কাছে এসে কিছুদিন থাকতে, আর আমাদের কলোনিতে কিছুদিন যাবত চোরের উৎপাত ও বেশ বেড়েছে, তাছাড়া দৈনন্দিন এটা সেটা আনতে হলে, আমাকেই যেতে হয় বাজারঘাটে, আমার মা আমাকে ছাড়া একা কোথাও বের হন না।
কাল যদি আমি দিল্লী যাই, তাহলে কবে ফেরত আসব, সেটা এখন থেকেই বলা যাবেনা। তাই বলছিলাম, আপনি যদি তেমন কাউকে আমাদের বাড়িতে রাখেন, যে কিনা আমাদের বাড়িতে থাকবে, দরকার পড়লে, কোনও জিনিষ আনতে বাইরেও যাবে, আবার সিক্যুরিটির কাজ ও করবে, তাহলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায়, দিল্লীতে গিয়ে কাজে মন দেওয়া যায়, নাহলে মন সব সময় এখানেই পরে থাকবে।
যদি দরকার হয় তাহলে ওকে কিছুটা পেমেন্ট আমিও করতে পারি। এই ব্যাপারটাতে আপনার সাহায্য চাই স্যার”। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলল রণ। মনে মনে ভাবল যা হয় হবে। আগে তাঁর মা, পরে চাকরি।
রণের সব কথা মন দিয়ে শুনলেন মিস্টার ব্যানারজি। শেষে একটু মুচকি হেসে বলে উঠলেন, “তুমি কি ভাব রণজয়, তোমাদের বাড়ির অবস্থা আমার কি অজানা? আমার যত এমপ্লয়ি আছে, সবার খবর আমাকে রাখতে হয়। তোমার যেন কোনও রকম অসুবিধা না হয়, সে ব্যাবস্থা আগের থেকেই করে রেখেছি আমি। তবে তোমাকে পেমেন্ট করতে হবেনা। যাকে রাখব, তাঁকে কোম্পানি পেমেন্ট করবে, তোমাদের বাড়িও বড়, ওকে একটা শেল্টারের ব্যাবস্থা করে দিও।
রাত টুকু ছাড়া সব সময় ও তোমাদের বাড়িতে থাকবে। একদম চিন্তা করবেনা। খুব বিশ্বাসী লোক কোম্পানির। মিসেস ঘোষের কোনও অসুবিধা হতে দেবনা। তাছাড়া ওনাকে আমার মোবাইল নম্বরও দিয়ে দিও। যে কোনও সময়ে, উনি আমাকে যে কোনও রকম সাহায্যের জন্য ফোন করতে পারেন, বলেই একটা বেল বাজালেন।
বেল বাজাতেই, একটা দশাসই চেহারার ষণ্ডামার্কা বছর পয়ত্রিশের লোক সামনে এসে কুর্ণিশ করে দাঁড়ালো। রণ এক দৃষ্টিতে আগে ওই লোকটাকে আপাদমস্তক দেখে নিল। পড়নে বডিগার্ড টাইপের সাফারি স্যুট, হাফ শার্টের ভেতর থেকে মাংসপেশিগুলো যেন ফেটে পড়ছে, লম্বায় প্রায় ছয় ফিট, গাট্টা গুটটা, চর্বিহীন সারা শরীর, ইস্পাতের মতন কাঠিন্য সারা শরীরে। “বাপরে, একে দেখে তো মা মূর্ছা যাবে, মনে মনে ভাবল রণ”।
“রমজান, বাবু কো সেলাম করো, ইনহি কা ঘর কা রাখওয়ালি করনা হাঁয়। মেমসাব কা পুরা ধ্যান রখনা হাঁয়। হো জায়েগা না”? গুরু গম্ভীর আওয়াজে আদেশ ভেসে আসলো মিস্টার ব্যানারজির গলা থেকে।
“জি সাব, সেলাম সাব। জান কুরবান সাব। এক খরোচ, নহি লগনে দুঙ্গা সাব”, বলে রণের দিকে পাথরের মতন তাকিয়ে থাকল, রমজান। মিস্টার ব্যানারজি বলে “উঠলেন, চিন্তা করবে না একদম, রমজান আমাদের কোম্পানির খুব বিশ্বাসী লোক। তাছাড়া ভালও বাংলা বলতে পারে। তাছাড়া আমি নিজেও কখনও কখনও গিয়ে সব কিছু দেখে নেব। ডোন্ট ওয়ারী রণজয়। গেট রেডি ফর টুমরো। কাবেরি নেক্সট সপ্তাহে দিল্লী যাবে তোমাকে হেল্প করার জন্য, একা মেয়ে মানুষ, একটু খেয়াল রেখো।
রণ কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করলো, মিস্টার ব্যানারজির কথায়। উঠে পড়ল বসের কেবিন থেকে, ঠিক একই সময়ে কাবেরি একগাদা ফাইল নিয়ে বসের কেবিনে ঢুকল। আর ঢোকার সময়, রণের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল, আর হতেই নিজের নিচের ঠোঁট টা কামড়ে রণকে চোখ মেরে একটা মুচকি হাসি হেসে কেবিনে ঢুকে পড়ল কাবেরি। কাবেরির এমন ইশারায় রণ ও হেসে ফেলল। ভারী মিস্টি মেয়েটা, কিন্তু চরম সেক্সি যাকে বলে। আগুনে ফিগার।
রণ ভাবল, এখন এইসব না চিন্তা করলেও চলবে। মাথায় অনেক কাজ এখন। সবথেকে মেজর কাজ হচ্ছে, মাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলা। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র কেনা। স্যুটকেস গছানো। টাকা পয়সার চিন্তা নেই। কোম্পানি অনলাইনে ট্র্যান্সফার করে দেবে। মায়ের হাতেও পর্যাপ্ত টাকা পয়সা আছে। সেই সব চিন্তা নেই রণের। সবথেকে মুশকিল হচ্ছে মা কে রাজী করানো।
এই সব ভাবতে ভাবতে বাইক স্টার্ট করে ঘরের উদ্দেশ্যে রউনা দিল রণজয়। যাওয়ার পথে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনে নিল রণ। জিনিষ পত্তর কিনে কিছুটা আসতেই, কি একটা মনে পড়তেই আবার বাইক ঘুড়িয়ে একটা ওষুধের দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। “দাদা একটা আনওয়ান্টেড72 প্যাকেট দিন তো”, ওষুধের নামটা শুনে একটু মুচকি হেসে দোকানি এগিয়ে আসলো। রণ বুদ্ধি করে এটা পাড়ার ওষুধের দোকান থেকে কেনেনি। পাড়ার সবাই চেনা।
অবিবাহিত রণ জন্ম নিরোধক মেডিসিন নিচ্ছে জানতে পারলে, পাঁচ কান একে ওকে বলে বেড়াবে, তাই পাড়ার বাইরের দোকান থেকে নেওয়াই শ্রেয় মনে করলো। দোকানি একটা প্যাকেটে ওটা ভরে জিজ্ঞেস করলো, “আর কিছু”? “হ্যাঁ, ভালও ফিমেল প্যাড দিন চার প্যাকেট আর গোটা দশেক প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দিন”। রণ এটাও কিনে রাখল যাতে মা কে বাইরে না বেড়তে হয়, একা একা এটা কেনার জন্য, আর একটা মা রমজানকে দিয়েও কেনানো যায়না।
হয়ত মা তাঁর হাত থেকে এইসব নিতে লজ্জা পাবে, কিন্তু কোনও উপায় নেই এছাড়া। আর ট্যাবলেটটা মায়ের ব্যথা র কাজে লাগবে, যদিও এই কয়েকদিনে মা বেশ খানিকটা ভালও হয়ে উঠেছে। এখন দিব্বি হাঁটাচলা করতে পারছে। আর মাঝে দুজনের মধ্যে তেমন কিছু হয়নি।
বাইকটা গ্যারেজে রেখে কলিং বেলে হাত রাখল রণ। বেলটা মিষ্টি ভাবে বেজে উঠতেই, ভেতর থেকে, “আসছিইইইইই…………”, বলে মায়ের সুন্দর আওয়াজ ভেসে আসলো। আসার পথে দোকান থেকে একটা দামি ক্যাডবেরি নিয়ে এসেছিল রণ, মহুয়ার জন্য। ঘরে ঢুকেই, রণ বলে উঠল, “মা, একটু হাঁ করো প্লিজ, চোখ বন্ধ করে”, বলে হাতের জিনিষ গুলো সোফাতে রেখে দিল, রণ। “কি এনেছিস আগে বল, নাহলে হাঁ করবোনা”, বলে কপট রাগ দেখিয়ে মুখ ঘুরিয়ে থাকল মহুয়া। রণের কাছেই তাঁর যাবতীয় সখ আহ্লাদ।
পেছন ঘুরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল মহুয়া। রণ পা টিপে টিপে মহুয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো, আজকে মহুয়া একটা তুঁতে রঙের পাতলা ফিনফিনে সাড়ী পড়েছে, সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউস, সাড়ীটা বিপদজনক ভাবে নাভির বেশ নিচে পড়া। গায়ের থেকে একটা সুন্দর পারফিউমের সুগন্ধ ভেসে আসছে, রণ ক্যাডবেরির র্যাাপারটা খুলে, একটা বড় টুকরো কামড়ে নিল। তারপর পা টিপে টিপে মহুয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে উঠল, “মা চোখ খুলবেনা, শুধু হাঁ করবে”, মহুয়া বাধ্য মেয়ের মতন, চোখ বন্ধ করে হাঁ করে থাকল।
রণ কোনও শব্দ না করে, মহুয়ার সামনে এসে, মুখের ক্যাডবেরিটা দুই দাঁতের মধ্যে ধরে, মহুয়ার হাঁ করা মুখের মধ্যে আসতে আসতে ঢুকিয়ে দিল। মহুয়া জিভে মিষ্টি স্বাদ পেয়ে, যেই মুখটা বন্ধ করতে গেল, সঙ্গে সঙ্গে রণ নিজের দুই পুরু ঠোঁট দিয়ে মহুয়ার নরম লিপস্টিক লাগান ঠোঁট দুটো চেপে ধরে ক্যাডবেরি সমেত চুষতে শুরু করে দিল।
“উম্মমমমমম………ছাড় বলছি………উম্মমমম……ছাড়……”, বলে ছটপট করতে শুরু করলো। মহুয়া যতই ছটপট করে, রণ ততই আরও বেশি করে মহুয়ার ঠোঁট জিভ চুষতে থাকে। ফলে যা হওয়ার তাই হল। মহুয়ার লিপস্টিক রঞ্জিত ঠোঁট আর ক্যাডবেরির রঙ মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষন ধরে মহুয়ার ঠোঁট চুষে রণ একটু দূরে দাঁড়িয়ে হাঁসতে লাগলো।
আর মহুয়া রাগে গজগজ করতে করতে নিজের ঠোঁটের পাশ টা মুছতে গিয়ে, ঠোঁটের আসে পাশে লেপটে থাকা লিপস্টিক আর ক্যাডবেরি দুই দিকের গালে নিজের অজান্তে আরও বেশি করে লেপটে দিল। আর তাই দেখে রণ হেঁসে গড়িয়ে পড়তে শুরু করলো। আর মহুয়া কাঁদো কাঁদো মুখে রণের দিকে তাকিয়ে থাকল। “তোর খুব বার বেড়েছে তাই না, রণ। দেখলি তো কি করলি আমাকে? এত ভালো করে দামি লিপস্টিক লাগিয়েছিলাম, দিলি তো সব নষ্ট করে শয়তান। এইভাবে কেউ ক্যাডবেরি খাওয়ায়?
ইসসসসসস………আমাকে আবার মুখ ধুতে হবে, অসভ্যটা সব নষ্ট করে দিল। বদমাশ কোথাকার”, বলে রাগে গজ গজ করতে করতে ওয়াশ বেসিনের জলে মুখ পরিষ্কার করতে লাগলো।
রণ হাসতে হাসতে জামা কাপড় ছাড়তে ছাড়তে বলে উঠল, “মা, তাড়াতাড়ি এস, তোমার সঙ্গে খুব দরকারি কথা আছে। আমি বাথরুম থেকে আসছি, ততক্ষনে তুমি ফ্রেশ হয়ে এসে বসবে আমার কাছে। খুব দরকারি আলোচনা আছে তোমার সঙ্গে”, বলে তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল রণ। মহুয়া তখনও মুখ ধুচ্ছে ওয়াশ বেসিনে, ওখান থেকেই জোরে বলে উঠল, “আমার আর কোনও কথা নেই তোর সঙ্গে, বুঝলি। আমি আর তোর সঙ্গে কোনও কথাই বলবনা।
তুই ভীষণ দুষ্টু হয়ে গেছিস, ডাইনিং টেবিলে খাবার দেওয়া আছে, এসে খেয়ে নিস”। রণ মায়ের কথা গুলো শুনে ভাবতে লাগলো, “ইসসসসসস………মা এখনও জানেনা যে কালকেই সন্ধ্যাবেলায় আমাকে এখানে থেকে কিছুদিনের জন্য চলে যেতে হবে, অনেক দূরে। মায়ের থেকে অনেক দূরে, সেখানে সে ইচ্ছে করলেই মায়ের হাতটা ধরতে পারবেনা।
এই টুকরো টুকরো ভালবাসাগুলো কাল সন্ধ্যার পর থেকে আর হবেনা। ইচ্ছে করলেই মাআআআ বলে ডাকতে পারবেনা”, ভাবতে ভাবতে দুচোখ জলে ভরে আসে রণের। ইসসসসস……মা যখন জানবে তখন কি হবে? কিভাবে বলবে সে তাঁর প্রানের থেকেও প্রিয় মা কে?
রণ বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসলো স্নান করে, ততক্ষনে মহুয়াও নিজেকে ঠিক করে নিয়েছে। রণের খাবার দিতে দিতে বলে উঠল মহুয়া, আজকে কি হয়েছে রে, তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলি? আজ কি অফিস বন্ধ হয়ে গেল নাকি? তোর শরীর টোরির ঠিক আছে তো? অফিসে কোনও ঝামেলা বাঁধাসনি তো? তাড়াতাড়ি চলে এলি কেন রে? আর ব্যাগে কি কি সব কিনে নিয়ে এসেছিস?
আমাকে কিছুই বলিসনি তো তুই? তুই বাজারে যাবি জানলে তোকে একটা জিনিস আনতে দিতাম, বলতে বলতে এক মনে খাবার বাড়তে লাগলো মহুয়া। গুনাক্ষরেও জানতে পারলো না পরিষ্কার নীল আকাশের ঈশান কোনে এক টুকরো কালো মেঘ তাঁর জীবনে ঘনিয়ে আসছে, ধীরে ধীরে। যেটা খুব শীঘ্রই তাঁর জিভনকে নরকে পরিবর্তিত করবে।
মহুয়ার মাধুর্য-১
মহুয়ার মাধুর্য-২
মহুয়ার মাধুর্য-৩
মহুয়ার মাধুর্য-৪
মহুয়ার মাধুর্য-৫
মহুয়ার মাধুর্য-৬
মহুয়ার মাধুর্য-৭
মহুয়ার মাধুর্য-৮
মহুয়ার মাধুর্য-৯
মহুয়ার মাধুর্য-১০
মহুয়ার মাধুর্য-১১
মহুয়ার মাধুর্য-১২
মহুয়ার মাধুর্য-১৩